অনুগল্প | দূর্বা




               অদৃশ্য কিংবা দৃশ্যমান | দূর্বা সরকার


[চিত্রণ: এমিলি ম্যাক্‌ইনটস, ইউ.এস.]

এগারো বছর অবধি পড়ে গিয়ে হাঁটু কেটে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলে বাবা বলতো, “কোথায় ব্যথা লেগেছে, দেখি! দাঁড়া, ওষুধ লাগিয়ে দিই। দেখানোর মত ব্যথা পেয়েছি তারপরেও, কিন্তু মা বাবার তুমুল ঝগড়া, আর পরবর্তী গভীর নীরবতায় একদিন এমন ব্যথা পেলাম, কিছুতেই কাউকে দেখাতে, বোঝাতে পারলাম না। পরবর্তী কয়েকবছর নিজের এই লীন-ব্যথাগুলো নিয়ে এত ভেবেছি, যে মনে হত আমিই সবচেয়ে দুঃখী!

ভুল ভেঙে দিলো বাপ্পা-দা, একদিন আমার মনখারাপ দেখে শুনিয়ে দিলো, “তোর সমবয়সী যত ছেলেমেয়ে আছে দেশে, তাদের কয়েক কোটির চেয়ে তুই অনেক ভালো আছিস। তোর তো খাওয়া পরার কোনো কষ্টই নেই! যখন যা দরকার, পেয়ে যাচ্ছিস। তাও তোর এত দুঃখ!” দেখলাম, সত্যিই তো, আমার তো কোনো কষ্ট নেই বাস্তবে! তারপর থেকে সহস্র অভিমানে মনকে ওই যুক্তিই দিয়েছি, যে পৃথিবীর অনেক অনেক মানুষের চেয়ে আমি ভালো আছি। কিন্তু, সেই অদৃশ্য ব্যথা মুছে যায়নি পুরোপুরি।

ইউনিভার্সিটিতে এসে দেখলাম, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে, তাদের আরো অনেক অনেক সমস্যা, অনেকরকম অদৃশ্য-দৃশ্যমান ব্যথা। অন্যদের দুঃখ, কষ্ট, সমস্যা দেখতে দেখতে নিজের সেই অদৃশ্য ব্যথাটা ম্লান হয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ! আরো বেশি সহজ হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, সতেরো বছরের মন, কখন যে নিজের চেয়ে অন্যকে বেশি ভালোবেসে ফেলে! প্রেমে পড়ে অন্যদের আরো বেশি করে আপন ভাবতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু ....

যে ফিরিয়ে দিয়েছিলো, সে তো সহজ থেকে গেছে, আমিই একটা অদৃশ্য কাঁটা বয়েছি পাঁচবছর। গভীর একটা হীনমন্যতা আত্মবিশ্বাসের জোরেও কাটাতে পারিনি বহুদিন। 

তারপরেও আরো কতভাবে অদৃশ্য ব্যথারা এসে আমায় বিব্রত করে গেছে! এখন আর দৃশ্যমান ব্যথার অবকাশ প্রায় নেই জীবনে। যত আঘাত, অভিযোগ, সব যেন এতটাই গভীর ক্ষত তৈরী করছে, যে তার কোনো নিশান থাকছেনা আলোতে।
---
 


আড্ডা, সাবেকী ভাষায় Interview



আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর


এখনো অ্যানাউন্সমেন্ট হয় নাই, আসবে কি না জানা নাই

Comments