অনুগল্প | রাজেশ




                       ব্যথার কোলাজ | রাজেশ চট্টোপাধ্যায়

আমি যে কেন মাঝে মাঝে এত ভাবি ভেবে পাই না। “কখনও কার কিছু হয়, আবার হয় না”। আমার পিসির বাড়ি মালদা, আমাদের গ্রাম থেকে পাচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগে যেতে, যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল না। তাই খুব কম যাওয়া হয়। পিসতুতো এক বোন আছে। আমি বাবা মায়ের ‘একাই একশ’, ওই বোনকে নিজের বোনের মত স্নেহ করি। তাই হাজার অসুবিধাতেও ভাইফোঁটার সময় ছুটে যাই।

এই বার ফোঁটার সময় আমার খুব শরীর খারাপ। জ্বর, সর্দি, বুকে ব্যথা, যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি। ঠিক যেন “ঘুরছি আমি, ঘুরছে চাকা”। তবু আগের দিন ঠিক হাজির আমি বোনের কাছে।

বোন আমার ক্লাস টুয়েলভ্‌, দু’দিন পর কলেজ যাবে। নতুন নতুন বয়সের ভার, একটু আধটু এদিক ওদিক, উশখুশ। নতুন ছেলে বন্ধু, কে কী বলল কোচিং-এ, কে কত রাতে কী এস.এম.এস দিয়েছে– আমাকে সবই শেয়ার করে। আমিও বলি– কলেজের কোন মেয়েটা টাওয়ার দিল, কোন টাওয়ারে আজকাল আর লাইট জ্বলে না, এটা সেটা। আগের দিন পৌঁছে অনেক গল্প হল, বিকেলে বাজারে নিয়ে গিয়ে ওকে গিফ্‌ট কিনে দিলাম। ও রাতে আমাকে শাসাল– পরের দিন যতক্ষ না ফোঁটা দেবে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতি বছর ও না খেয়ে থাকে আর আমি লুচি ভাজার সময়ই দুটো খেয়ে নিই। আমি এবার একটু জড়সড়।

ভোরবেলা উঠেই দেখি বোন আমার স্নান সেরে শিশির ধরল, দূর্বাঘাস আনল, চন্দন বাঁটল। বুঝলাম বোন বড় হয়ে গেছে, একদম পাক্কা বুড়ি। আমি কিন্তু কিছু খাই নি, ওর নিষ্ঠা দেখে আমি আর কিছু খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করিনি। শরীরটাও খারাপ ছিল, শুধু বোনটার জন্য এতদুর ছুটে আসা, একেই হয়ত অপত্য টান বলে।

এবার সেই চরম মুহূর্ত– ভাইফোঁটা। আমি স্নান সেরে, পাঞ্জাবী পড়ে যথা আসনে বসে, দেখি বোনের পাত্তা নেই। পিসি তো রান্নার কাজে ব্যস্ত। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর মহারাণী এলেন। এসে বলল, ও ফোঁটা দিতে পারবে না। আমি চিন্তায় পড়লাম, রাগ হল নাকি! ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, সেই একই কথা। আমার মনে প্রশ্ন– ‘দেবে না’ নাকি ‘দিতে পারবে না’! উত্তর পেলাম– ‘পারবে না’। কার? কোনও কার নেই। আমি তখন ক্ষুব্ধ, এই শরীর নিয়ে যার জন্য এতদুর এলাম সেটাই হবে না! জানলাম– বোনের পিরিয়ড হয়েছে। তাই ও নাকি অপবিত্র। এ অবস্থায় ফোঁটা দিলে ভাইয়ের অমঙ্গল হবে। আমি আমার ভাবনা নিয়ে সোচ্চার হলাম– রীতিমত প্রতিবাদ। নাহ্‌, আমি কাউকে বোঝাতে পারিনি। ও কিছুতেই ফোঁটা দিল না।

সেদিন আমি যে ব্যথা নিয়ে ফিরেছিলাম তার চেয়ে বহুগু ব্যথা সেদিন সয়েছিল আমার আদরের বোন। আমাদের সমাজ, রীতিনীতি এভাবেই ব্যথা দিয়ে যায় অবিরাম। আমরা নীরব দর্শক হয়েই রয়ে যায় এক বুক ব্যথা নিয়ে।


[The Tampon Poem Sierra DeMulder]
 



আড্ডা, সাবেকী ভাষায় Interview



আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর


এখনো অ্যানাউন্সমেন্ট হয় নাই, আসবে কি না জানা নাই

Comments