প্রচ্ছদের ব্যথা | সাবির



                            প্রচ্ছদের ব্যথা | সাবির আলী
[ ব্যথা(দুই): সাবির আলী, শান্তিনিকেতন ]

ব্যথা নিয়ে কি লিখব? লেখা আমার কাজ নয়। আর লিখতে গেলেও সব এলোমেলো হয়ে যায়। আমি শ্রুতি আর স্মৃতি নিয়ে দিব্য থাকি। লেখায় ঠিক সবটা গুছিয়ে উঠতে পারিনা। বরং লেখার চেয়ে আঁকাজোকায় একটু বেশি স্বচ্ছন্দ যেদিন প্রথম সৌম্য-র মেসেজটা পাই, সেই ঘটনাটা বলি আপনাদের- সৌম্য লিখল যে সাবির’দা, আমাদের দ ল ছু ট –এর একটা সংখ্যার জন্য একটা প্রচ্ছদ করে দেবে? টাকা দিতে পারবো না কিন্তু। সময়-সুযোগ হলে জানিও। সংখ্যার থিমটা নিয়ে একটু কথা বলব। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেই সময় বের করলাম। সৌম্যকে উত্তর দিলাম অনেকটা এরকম- আমি সবসময় টাকার জন্য কাজ করিনা। বলো, থিম কি? ও বলল- ব্যথা। আরও অনেক কিছু বলল। আমি কাজ শুরু করলাম। কাজ ফেলে রেখে দেওয়া কোনদিনই অভ্যাস নেই, তাই রাখিও নিজলরঙে জীবনীশক্তি আছে, তাই জলরঙেই প্রচ্ছদ তৈরি করে ফেললাম। এরপর যেটি উপভোগ করলাম সেটি ভারী অদ্ভুত! সৌম্য আমার সাথে একটা র‍্যাপিড ফায়ার রাউন্ড খেলে ফেলল। সেই খেলাটাই তুলে দিলাম এখানে 
এক, আঁকার জন্য প্রিয় প্রেরণা?
– মানুষের মুখের আদল।
দুই, আঁকার ক্ষেত্রে প্রিয় বিষয়?
– সার্বিক মানুষের অস্তিত্ব।
তিন, প্রিয় খাবার, যা না খেতে পারলে মনে হয় যে আর বাঁচবো না?
– খাওয়ার চেয়েও বেশি ভালোবাসি রান্না করে খাওয়াতে। খাবার স্বাদের চেয়েও বেশি উপভোগ করি খিদের স্বাদ। অনেকসময় মাঝরাতে মুড়ি-চানাচুরও স্বর্গীয় মনে হয়।
চার, গীটারটা হাতে তুললেই যার গান গাইতে ইচ্ছে হয়?
– অঞ্জন দত্ত। এবং ‘একদিন বৃষ্টিতে’।
পাঁচ, যে ছবিটা আঁকার পর নিজের প্রথম মনে হয়েছিল যে নাহ্‌, মন্দ আঁকি না তো আমি?
– পৃথিবীর কোনও ছবিই খারাপ নয়। প্রত্যেক ছবিই ভিন্ন ভিন্ন রূপে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে। ছবি আমরা যতটা আঁকতে চাই, তার চেয়ে আঁকার ওই মুহূর্তে ছবি নিজেই এগিয়ে দেয় অনেকটা বেশি। এটা অনেকটা নিজের ছায়া দেখে অন্য কাউকে ভেবে করমর্দনের মতো। শৈশবে যখন আঁকতে শুরু করি, তখন কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক, আলাদা করে বুঝতাম না। এতদিন ছবি আঁকার পর বুঝলাম আগেও আমি ঠিক পথেই হাঁটতাম। আজও ঠিক পথেই হাঁটছি। কেবল মানচিত্রটা হাতে নিয়ে রয়েছি। এইটুকুই।
ছয়, সমসাময়িক ভালো লাগার চিত্রশিল্পী?
– অনেকেই আছেন, তবে আমি ভূপেন খাক্করের ছবির কথা উঠলে দুর্বল হয়ে পড়ি। আমরা শুধুই ছবিতে কি কি করতে পারলাম, সেই নিয়েই কথা বলে যাই। কিন্তু ওই মানুষটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন যে ব্যর্থতাকেই সম্বল করে কিভাবে প্রবল উৎসাহ ভরে ছবি এঁকে যাওয়া যায়।
সাত, তোমার কাছে ব্যথা ঠিক কি?
– ছেলেবেলায় একটা তিন চাকার সাইকেলের জন্য খুব বায়না ধরেছিলাম। বাড়িতে সকলেই বলতেন, আরও একটু বড় হয়ে ওঠো, তারপর ইয়াব্বড় বাই-সাইকেল পাবে। হপ্তাখানেক বিপ্লবও করলাম তিন চাকার সাইকেলটা পাওয়ার জন্য। কিন্তু পাওয়া গেলনা। তারপর একদিন সত্যি সত্যিই বড় হয়ে গেলাম। বাই-সাইকেল, বাইক সবই এলো। আজ বেশ কয়েকটা দাড়ি-গোঁফও পেকে গেছে, মাঝবয়েসী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। মাসের শেষে ব্যাঙ্ক ব্যালান্সও থাকে। ব্যস্ত ফুটপাথের ধারে আজও সেই নানান রঙের তিন চাকার সাইকেল গুলোকে একইভাবে ঝুলতে দেখি। চাইলেই কিনেও ফেলতে পারি। কিন্তু যখন সম্বিৎ ফিরে পাই যে আজ আর ওই সাইকেলে চড়ে বসতেই পারবো না, তখন বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। নিজেকেই জিজ্ঞেস করে বসি, বড় হয়েছি বলে কি ছোট হতে নেই আর? কোনো উত্তর পাইনি, শুধুই ব্যথা...
আট, ব্যথা পেলেই কি শিল্প এগিয়ে আসে গুটি গুটি পায়ে?
– ভাবো একবার, একটা ফিল্মে ব্যথা দেখলে তুমি কেন কাঁদো? বা একজন কোন একটা স্বীকৃতি বা পুরস্কার পেলে কেঁদে ওঠেন। কেন? কারণ, না পাওয়ার ব্যথা সবচেয়ে বেশি মনে ধরে আমাদের। আর এখানেই শিল্পের দরকার। তুমি যেমন লেখা থামাতে পারবে না, আমিও আর তুলি থামাতে পারবো না। যেখানে ব্যথা, সেখানেই আঙুল ছুঁয়ে দেখা আমাদের অভ্যাস, পরখ করে দেখি ব্যথা আছে ব্যথার মতোই। রুমি তাই তো লিখতে পারেন যে ব্যথা আমাকে স্মরণ করায় যে আমি জড় নই।
নয়, শিল্প আর শিল্পের দাম: কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
– হনুমানের কাছে যেমন কলা, মানুষের কাছে তেমন কলাকার। তবে সবাই ঘুম ভাঙার পরে স্বপ্নটা আর ঠিক ঠিক মনে করতে পারেনা
দশ, নিজেকে চিত্র শিল্পী হিসেবে কত নম্বর দেবে দশের মধ্যে?
– দশে দশ। কারও আপত্তি থাকলে, বেশি দিচ্ছি মনে হলে তবে ঠিক হ্যায়। পাঁচে পাঁচ দিলাম।
দেখুন তো, লিখব না লিখব না করেও কত কথা লিখে ফেললাম। কত কথা মনে পড়েও গেল। ব্যথাগুলো দলা পাকিয়ে ওঠার আগেই থেমে যেতে হবে। তা না হলে আরও এক পাতা নামিয়ে দিতে পারি। দলছুটের ব্যথা সংখ্যায় বাকী সকলের লেখা পড়ুন। দ ল ছু ট -দের শুভেচ্ছা।
                                         --- | |


আড্ডা, সাবেকী ভাষায় Interview



আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর


এখনো অ্যানাউন্সমেন্ট হয় নাই, আসবে কি না জানা নাই

Comments

  1. Enjoyed reading the piece and associating it with the picture. the fluid and flowing interview gave a good peak into the artist's mind his nature and thought process.

    ReplyDelete
  2. @ Jaylakshmi Bhattacharya,

    Thanks for reading and your comment. Generally few of us have an established notion that painter cannot write good, and that's why he's taken always for painting only. Plenty of Little Magazines, Magazines get published everyday with good/bad cover & back cover on it. But we never get their views on it. So, Dolchhut tried to get those untold pains of the cover artist. And Sabir Ali has unfolded his pain for this special issue. Thanks. Read other pieces of Pain Issue too. Happy reading!

    ReplyDelete

Post a Comment